ব্রেকিং নিউজ ::
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বিশ্বস্ত গণমাধ্যম মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রথম জাতীয় দৈনিক আমাদের’৭১ পত্রিকার প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণে আপনাকে স্বাগতম। নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত প্রিন্ট কপির জন্য আজই হকারকে বলে রাখুন।।

প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর হত্যা : লঞ্চের ছাদ থেকে ফেলে দেয় লাশ

  • আপডেট টাইম : Friday, September 27, 2024
  • 31 Time View

ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া তরুণীর মরদেহের পরিচয় মিলেছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবার লাশটি গতকাল সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেছেন। তবে ওই তরুণীর পরিবার দাবি করেছে ধর্ষণের পর জোসনাকে হত্যা করে তার লাশ লঞ্চের ছাদ থেকে ফেলে  দেয়া হয়। 

এর আগে বুধবার দুপুরের দিকে চরফ্যাশনের মেঘনা নদীর প্রশান্তি পার্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে জোছনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে মরদেহটির পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া গেলেও বিকালের দিকে পরিবার মরদেহটি শনাক্ত করে। জোছনার বাড়ি চরফ্যাশনের এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। সে ওই ওয়ার্ডের দিনমজুর জাহাঙ্গীর ও কুলসুম বেগমের মেয়ে। তার স্বামীর নাম মো. রাকিবুল ইসলাম। জোছনার মা কুলসুম বেগম জানান, গেল ৬ মাস আগে একই উপজেলার হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রিকশাচালক রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে জোছনার বিয়ে হয়। বিয়ের ২ মাস পর শশুরবাড়ির লোকজন তাকে ঢাকার গাবতলীতে নিয়ে যায়। তবে রাকিবের সংসারে খুব অভাব ছিল। দিন এনে দিন খেতে তার সংসারে কষ্ট হতো। প্রায়ই জোছনা তার মাকে ফোন করে বলতো, রাকিবের সংসারে সে খুব অভাবে আছে, কষ্টে আছে।

গাবতলীতে যাওয়ার ১ মাস পর মানিক নামের এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে জোছনার। এরপর একাধিকবার গাবতলী থেকে মানিকের সঙ্গে সে পালিয়ে যায়। এসব ঘটনার কারণে জোছনাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় শশুরবাড়ির লোকজন। দেড়মাস আগে ঢাকা থেকে সে গ্রামের বাড়িতে আসে।
এখানে এসেও পরকীয়া প্রেমিক মানিকের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। সবশেষ চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মানিক ঢাকা থেকে জোছনার গ্রামের বাড়ি চরফ্যাশনে আসে। এরপর সেখান থেকে জোছনাকে নিয়ে মানিক পালিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয়রা তাকে গণধোলাই দিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলেন। কিন্তু, মানিক ঢাকা না গিয়ে একরাত চরফ্যাশনের একটি হোটেলে থাকে। পরদিন পুনরায় জোছনার সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাকে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়।

ঢাকায় গিয়ে মানিক জোছনার মাকে ফোন করে জানায়, তারা দু’জন সেখানে বিয়ে করেছেন। এরপর জোছনার মা মানিকের কাছে অনুনয়-বিনয় করলে ১৪ই সেপ্টেম্বর বিকালে মানিক জোছনার মাকে ফোন করে জানায়, সদরঘাট থেকে জোছনা হারিয়ে গেছে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
জোছনাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে আমার মেয়েকে মানিক বিয়ে না করেই লঞ্চে ধর্ষণ করে ছাদ থেকে নদীতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেছে। আমি আমার মেয়ে জোছনার হত্যাকারীর বিচার চাই। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি আরও বলেন, মেয়েটি আমার খুব আদরের। দুই ভাইয়ের মধ্যে জোছনা বড়। আমার পরিবারটি দরিদ্র হওয়ার কারণে ১৬ বছর বয়সে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দেই।
নিহত জোছনার স্বামী রাকিবুল ইসলাম জানান, খুব অল্প বয়সেই তিনি জোছনাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু, অভাবের সংসারে তিনি তাকে সুখে শান্তিতে রাখতে পারেননি। পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে সে আজ খুন হয়েছে। জোছনার পরকীয়া প্রেমিক মানিকের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। জোছনার শাশুড়ি জানিয়েছেন, মানিকের বাড়িও ভোলায়। তবে ভোলার কোন জায়গায়, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। এ ছাড়াও জোছনা এবং রাকিবের পরিবার মানিককে ভালোভাবে চেনে-জানে না।
এদিকে বুধবার দুপুরের দিকে জোছনার লাশ উদ্ধার হওয়ার পর পরিচয় শনাক্ত না হওয়ার কারণে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে তার লাশের ছবি পোস্ট করেন।

আল-আমীন ফরাজি নামের এক ব্যক্তি জোছনার লাশের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, গতকালকে (মঙ্গলবার) ঢাকা থেকে চরফ্যাশন এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় এই মেয়েটাকে আমরা কর্ণফুলী-১২ লঞ্চে দেখেছি, হাউমাউ করতেছে। তখনো লঞ্চ সদরঘাটে। মেয়েটির সুন্দর চেহারা অথচ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। রাতে তাকে ৩ তলার সামনে নিয়ে গেছে একটি লোক। আজ দুপুরে ফেসবুকে দেখি অনেকেই পোস্ট করছে বেতুয়া এলাকায় একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। যখন এই ছবিটা দেখলাম। তখনই আমার মনে হলো এই মেয়েটাকে তো গতকাল রাতে কর্ণফুলী ১২ লঞ্চে দেখেছিলাম। আসলে কেমনে কী হয়েছে আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন।
ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শরিফুল হক বলেন, ‘জোছনার মৃত্যুর বিষয়ে প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। যখন অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, তখনো তার পরিচয় মেলেনি। বিকালের দিকে জোছনার পরিবার চরফ্যাশন থানায় গিয়ে পরিচয় শনাক্ত করেছে। জোছনার পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর তার বিষয়ে পুলিশ বিস্তারিত জানতে পেরেছে।

ঘটনাটি মর্মান্তিক উল্লেখ করে শরিফুল হক বলেন, এটি যদি হত্যা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই হত্যা মামলা হবে। পুলিশ ঘটনাটির বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। খবর- মানবজমিন

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর...
All rights reserved @ The Daily Amader 71
Site Customized By NewsTech.Com