কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম কোনো সরকারপ্রধান, যিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এর আগে বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেনি।
সদ্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সোমবার ( ৫ আগস্ট) সকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দেশ ছাড়েন। যাওয়ার সময় সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন।
প্রবল গণআন্দোলনে এখন পর্যন্ত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তবে এরশাদ দেশ ছাড়েননি। তিনি দেশেই ছিলেন। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তবে ওই সরকার নির্বাচন করতে না পারলে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলা হলেও তিনি যেতে রাজি হননি।
পদত্যাগ করার কয়েকদিন আগেই কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে তার পালানোর গুজব প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না।’
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫৩ বছরে যারা সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্রপতি, কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ প্রধান উপদেষ্টা আবার কেউ সামরিক শাসন জারি করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি এবং সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেন। ১৯৭৫ সালের আগস্টের ১৫ তারিখে একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। ওই দিনই দেশে সামরিক আইন জারি করেন। ওই বছরের ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ওই দিন তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
ওই সময় তিন নভেম্বরের অভ্যুত্থানে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান পদচ্যুত হন। অভ্যুত্থানের নেতা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন এবং ছয়ই নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করেন। পর দিন খালেদ মোশাররফ নিহত হন। তখন সেনাপ্রধান পদে আবার আসেন জিয়াউর রহমান।
এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট সায়েমকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এর এক বছর গণ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভুত্থানে নিহত হন জিয়াউর রহমান। তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি হন আবদুস সাত্তার। তবে বেশিদিন ওই পদে থাকেননি তিনি। এক বছর পর সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাঁর শাসনামল শেষ হয় ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর।
এছাড়া অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিন আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি লতিফুর রহমান, অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ও ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পালন করে পরবর্তী সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।