আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, প্রতিটি হত্যার বিচার হবে, প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে। আপনাদের (জনগণ) সব দাবি পূরণ করা হবে।
সেনাবাহিনীর প্রতি আশা রাখার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা আমাদের সহযোগিতা করেন। চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি জনগণের জানমালের দায়িত্ব নিয়েছি। আপনাদের সব দাবি পূরণ করা হবে।
সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, আমি সব রাজনৈতিক দলের নেত্রীবৃন্দকে আমন্ত্রণ করেছিলাম। উনারা এসেছেন, উনাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা করেছি৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে এ দেশের সব কার্যকলাপ চলবে। আমি আজ রাষ্ট্রপতির কাছে যাব, সেখানে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা করব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে আমরা দেশ পরিচালনা করব।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সব হত্যা ও অন্যায়ের বিচার করব। আপনারা সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমি সব দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি আপনারা আশাহত হবে না। যত দাবি আছে সে দাবিগুলো আমরা পূরণ করব এবং দেশে একটা শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। দয়া করে ভাঙচুর, হত্যা, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত হোন। আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি এক সঙ্গে কাজ করি তাহলে একটা সুন্দর পরিণতির দিকে যাব। আপনারা দয়া করে আমাদের সাহায্য করেন। মারামারি করে আমরা আর কিছু পাব না। দয়া করে আপনারা সব ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হোন। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটা হত্যার বিচার করা হবে। প্রতিটা অন্যায়ের বিচার করা হবে। আমরা আজকে সুন্দরভাবে আলোচনা করেছি। প্রতিটা প্রধান প্রধান দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করছি। আমরা সুন্দর একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করব।
সেনাপ্রধান জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এখন একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব। আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন, আমাদের কিছু সময় দেন। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাই মিলে সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হব। আপনারা আর এই সংঘাতের পথে যাবেন না এবং শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফেরত চলে আসুন। দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে, অর্থ-সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, লোকজন মারা যাচ্ছে; এগুলো থেকে আপনারা বিরত হোন, আমাদের সাহায্য করুন। আমি সব দায়িত্ব নিচ্ছি।
কোন কোন দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, জানতে চাইলে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, জামায়াতের আমির ছিলেন, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেত্রীবৃন্দ ছিলেন, জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেত্রীবৃন্দ ছিলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ড.আসিফ নজরুল উপস্থিত ছিলেন। আমার সামনেই ড.আসিফ নজরুল সব শিক্ষার্থীদের সুন্দর একটা বার্তাও দিয়েছেন। আশা করি এই বার্তা শুনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমরা সুন্দর একটি পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাব।
আলোচনায় আওয়ামী লীগের কেউ ছিল কি না, জানতে চাইলে সেনাপ্রধান বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না।
রাষ্ট্রপতির কাছে আজকেই যাবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আজকেই যাব, আমাদের হাতে সময় নেই। এইটা একটা বিশেষ পরিস্থিতি। আমরা আজ গিয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ চালিয়ে যাবে। ছাত্রসহ রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ ও কর্মীদের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা।
কারফিউ শিথিলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি দেশ শান্ত হয়ে যায় তাহলে কারফিউর আর প্রয়োজন নেই। কোনো জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই, কোনো গুলাগুলির প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়েছি সেনাবাহিনী কোনো গুলি করবে না, পুলিশ কোনো গুলি করবে না। আশা করছি আমার বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমরা একটা সুন্দর পরিবেশের দিকে যাচ্ছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকে রাতের মধ্যে একটা সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু আমাদের হয়ত দুয়েক দিন সময় নিতে হতে পারে।
খবর ও ছবি ঢাকা পোস্ট